মেহেরপুরে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর কতিপয় কর্মকর্তার ব্যাপক অনিয়মের কারণে তামাক চাষীরা বিপাকে পড়েছে।ফলে তারা কোম্পানীর ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগের প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
কোম্পনীর খেয়াল-খুশি মত তামাকের দাম দেওয়ায় চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাজার হাজার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে কৃষক এখন বিপর্যয়ের মুখে। মাঠ পর্যায়ে কৃষক হাজার হাজার মন তামাক বিক্রয় করতে না পেড়ে ঘরে জমা করে রেখেছে। কোম্পানী গুলো তামাক কিনছে দালাল ফড়িয়ার কাছ থেকে। এভাবেই কোম্পানীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মাঠ পর্যায়ের ফড়িয়া দালালও তামাক ব্যবসায়িরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও দেখার কেউ নেই।
সরকারের কোন পর্যবে¶ণ না থাকায় বেসরকারি এই তামাক সেক্টরে কোম্পানী গুলোর বিরুদ্ধে কৃষকরা সেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছে। সরকারিভাবে তামাক চাষের নিরুৎসাহিত করার সর্ম্পকে মেহেরপুর সহ পার্শবর্তী জেলা সমূহের মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন প্রচার প্রচারনা নেই। এই সুযোগে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকৃত কয়েকটি তামাকজাত পন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা কৃষি উপকরণ ক্রয় করে কৃষকের মাঝে ঋণ হিসাবে বিতরন করে।
হাটবোয়ালিয়া গ্রামের তামাক চাষী কাউছার আলী জানান, তিনি ১৮ বেল তামাক নিয়ে গিয়েছিলেন কোম্পানীর ডিপোতে কিন্তু ওজন ও মূল্যে কম দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৮ বেল তামাক নানা অজুহাতে ফোরত দেয়া হয়েছে।
ভাংবাড়িয়া গ্রামের,মজিরুল, সাইফুল, কেশবপুরের লালচাদ, মোড়ভাঙ্গার আরমান, কাথুলীর হাসেম আলী, নওয়াপাড়ার আজমত আলী সহ বেশ কয়েকজন তামাক চাষী বলেন কোম্পানীর বিরুদ্ধে কথা বললে কার্ড কেটে দেবে। তাই কার্ড কেটে দেওয়ার ভয়ে কোম্পানীর বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাইনা কেউ।
তারা আরো বলেন, তামাক চাষের মৌসুমে এক হেক্টর তামাক চাষ করতে সার, কীটনাশক, বীজসহ নানা কৃষি সামগ্রী ব্রিটিশ আমেরিকা ট্যোবাকো কোম্পানী ঋন হিসাবে সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তা নিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষককে কার্ড দেয়া হয়েছে। এখন তামাক উৎপাদন করে পড়েছি বেকায়দায় তামাকে কোয়ালিটি নিম্নমানের অযুহাতে তামাকের মূল্যে কম দেয়া হচ্ছে। আবার ৭০ কেজি ওজনের বেল কোম্পানীর ক্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলে প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ওজন নির্ধারন করা হচ্ছে। উৎকোচ দিলে পুরো কোম্পানীর দরেই তামাক নিচ্ছে। তখন নিম্নমানের তামাকের কোয়ালিটি উন্নতমানের হয়ে যাচ্ছে। কার্ডধারী কৃষকের ঋনের টাকা পরিশোধ করতে যেটুকু তামাক ক্রয় করা প্রয়োজন সেটুকু কোম্পানী গুলো নিচ্ছে। চাষীরা জানান, ব্রিটিশ আমেরিকা ট্যোবাকো মহাখালীর প্রধান কার্যালয়ে ৯৮৪২৭৯২ নং টেলিফোনে এবং লিখিত ভাবে চাষীদের হয়রানী সংক্রান্ত অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যান সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা জানান,তার ইউনিয়নের বেশ কিছু তামাক চাষীরা ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বিরুদ্ধে ওজনে কম দেয়া,মূল্যে সঠিক না দেয়া ও নানা অজুহাতে তামাকের বেল ফেরত দেয়া সহ বিস্তর অভিযোগ করেছেন। ট্যোবাকো কোম্পানী ও ব্রিটিশ আমেরিকা ট্যোকাকো কোম্পানীর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিকট চাষীরা প্রতিরিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। খোদ সরকার যেখানে এই মরণ চাষ তামাক চাষের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সেখানে কি ভাবে দিনের পর দিন এ সকল কোম্পানী কৃষকদের নানা প্রলোভনে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে তা কারো বোধ গম্য নয়।
এ ব্যপারে কথা বলতে মেহেরপুরের ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর মেহেরপুর শাখার জিএম সাজ্জাদ হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ (গ্রহন) করেননী। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনী জানান,চাষীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।