ছেলে হোক মেয়ে হোক, শৈশবে পুতুল খেলেনি এ রকম লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। নিজ হাতে বানানো পুতুল, মায়ের বানিয়ে দেওয়া পুতুল, মেলায় কেনা পুতুল সঙ্গী হয়েছে শৈশবের। বর, বউ, ছেলে, মেয়ে, কুকুর, বিড়াল, গরু, ঘোড়া, হাতি, নৌকা—আরও কত রকমের পুতুল! পুতুল খেলা নিয়ে হইচই, ঝগড়াঝাঁটি, কান্নাকাটি, মান-অভিমান—এসবই বোধ হয় অনেকেরই ছোটবেলার স্মৃতিজাগানিয়া গল্প। সে রকমই পুতুলের সমারোহ ছিল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। সেখানে ৫৩৪টি নানা রকমের পুতুল নিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘পুতুল: বাংলার প্রাণ-প্রতিমা’।
প্রদর্শনীর একটি বড় অংশে ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রহ করা বেশ কিছু পুতুল। তিনি বাংলার লোকঐতিহ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে লোকজ উপাদান সংগ্রহ করতেন। শিল্পাচার্যের আবেগ, ভালোবাসা এবং দায়িত্বশীলতার স্মারক হয়ে প্রদর্শনীতে এসেছে পুতুলগুলো। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কিছু চিত্রকর্মে টেপা পুতুলের আদল দেখা যায়, এটি বোঝানোর জন্যও শিল্পীর চিত্রকর্মও (প্রিন্ট) রাখা ছিল প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীতে দেখা হলো চিত্রশিল্পী সামিনা নাফিজের সঙ্গে। জানালেন, ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলা ঘুরে স্থানীয় মেলা বা উৎসব থেকে সংগ্রহ করেছেন নানান পুতুল। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বেশির ভাগ পুতুলই তাঁর সেই ভান্ডারের। তিনি জানান, পুতুল সংগ্রহের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলাকে প্রাথমিকভাবে বেছে নিয়েছিলেন। প্রদর্শনীতে জেলাভিত্তিক ভাগ করে পুতুলগুলো সাজানো হয়েছে। পুতুলগুলোর গড়ন ও বৈশিষ্ট্য অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। ময়মনসিংহের ছয় জেলার ৪৫ জন লোক ও কারুশিল্পীর তৈরি পুতুলের পাশাপাশি আরও কিছু শিল্পকর্মও ছিল প্রদর্শনীতে।
নানা জায়গার বিচিত্র পুতুলগুলো দেখে সহজে বোঝা যায় মাটিসংলগ্ন মানুষের সরল চিন্তার সহজ বহিঃপ্রকাশ রয়েছে এগুলোতে।
আছে ঐতিহ্যবাহী পুতুল। নানা আঙ্গিকের এসব পুতুলে উঠে এসেছে আবহমান বাংলার যাপিত জীবনের চিত্র।