নেইমারের কী হয়েছে? যত দিন যাচ্ছে ততই নেতিবাচক খবরের জন্য শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। জন্ম দিচ্ছেন বিতর্কের। বার্সেলোনাতেও এত বেশি বিতর্কের জন্ম দেননি তিনি, যতটা না পিএসজিতে এসে দিচ্ছেন। এর পেছনের কারণ কী? নেইমার কি আসলেই পিএসজিতে থাকতে চাচ্ছেন না?
ব্রাজিলের সবচেয়ে দামি তারকা নেইমার। সব সময় থাকতে চান পাদপ্রদীপের আলোয়। পূর্বসূরি পেলে-জিকো-রোনালদো-রোনালদিনহোদের মতো তিনিও চান তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠুক একটা দলের রণপরিকল্পনা। এ কারণেই বার্সেলোনায় মেসির সহকারী হওয়ার চেয়ে পিএসজিতে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ব্রাজিলীয় তারকা জানতেন, মেসির আড়ালে পড়ে থাকলে ব্যালন ডি’অর স্বপ্নই থেকে যাবে। কিন্তু পিএসজিতে যাওয়ার পর থেকে নেইমার কি আদৌ সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন?
পিএসজিতে যাওয়ার পর থেকেই চোটে জর্জর তিনি। তাই চাইলেও দলকে দরকারের সময়ে সাহায্য করতে পারেননি। নেইমারের ওপর দল নির্ভরশীল ছিল, যেদিন নেইমার খেলেননি, পিএসজিকে সাদামাটা মনে হয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোতে যখন নেইমার ছিলেন, পিএসজি খেলেছে প্রবল পরাক্রমে। দ্বিতীয় রাউন্ডের আগেই চোটে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন। পিএসজিও দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে বিদায় নিল। প্রতিনিয়ত নিজের খেলোয়াড়ি দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি একজন সেরা খেলোয়াড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিজেকে যথাসম্ভব চোটমুক্ত রাখা। যে কারণেই হোক না কেন, নেইমার পারেননি সেটা। ফলে ভুগছে পিএসজি।
এ তো গেল মাঠের ভেতরকার অবস্থা। মাঠের বাইরেও লাগামছাড়া আচরণের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন নেইমার। যখন-তখন ব্রাজিলে গিয়ে কার্নিভ্যাল উৎসবে যোগ দেওয়া, নিয়মিত পার্টি করে বেসামাল হওয়া, এসব নিত্যকার কাহিনি। কিছুদিন পরপর কোনো না কোনো গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, সেখানে এমন কিছু বলছেন যা তাঁকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসছে। কিন্তু বিতর্ক ছড়াচ্ছে দেদার। দলবদলের সময়ে ইঙ্গিতপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজেই দলবদলের আলোচনা উসকে দেন। কখনো রিয়াল মাদ্রিদ আবার কখনো বার্সেলোনাকে জড়িয়ে কথা বলছেন নেইমার। যেখানে পিএসজি নেইমারকে মাথায় করে রাখছে, ইউরোপীয় পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে নেতা বানিয়েছে, সেখানে প্রতি দলবদলের সময় বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেইমার কি পিএসজিকে অসম্মান করছেন না?
কিছুদিন আগে উয়েফাকে নিয়ে বাজে কথা বলে নিষিদ্ধ হয়েছেন নেইমার। শেষ মুহূর্তের বিতর্কিত পেনাল্টিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় পিএসজি। ম্যাচের পর নেইমার ইনস্টাগ্রামে গালাগাল করেছিলেন উয়েফাকে। এ কারণে সামনের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম তিন ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। এতে তো ক্ষতি পিএসজিরই। নেইমারের পেছনে ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করার সুফল পিএসজি এই মৌসুমে পেয়েছে কি না, সে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এবার শুধু লিগ ছাড়া আর একটা শিরোপাও জেতেনি পিএসজি।
কয়েক দিন আগে নেইমারকে এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নেইমার পাল্টা আরেক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলে যাবেন বলে কথা দিয়েছেন। এই নিয়ে তোলপাড় চলছে ব্রাজিলে। অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল পিএসজিও। ফুটবলার হিসেবে নিজেকে উন্নত করার জন্য, মেসি-রোনালদোর কাছ থেকে বিশ্বসেরার খেতাব নেওয়ার জন্য যেখানে নেইমারের খাটার দরকার দিনরাত, সেখানে এসব করে নেইমার কি ক্লাবের সঙ্গে নিজেরও ক্ষতি করছেন না?
ভেতরে-ভেতরে পিএসজির খেলোয়াড়েরা নেইমারের ওপর যে বিরক্ত হচ্ছেন, এটা আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছে। ফরাসি কাপে রেনেঁর সঙ্গে হেরে যাওয়ার পরে নেইমার তোপ দেগেছেন দলের তরুণ সতীর্থদের ওপর। দলের ব্যর্থতার দায় তরুণ খেলোয়াড়দের ঘাড়ে ফেলেছেন। তাঁদের আচরণের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ড্রেসিংরুমে আমাদের আরও বেশি পুরুষালি আচরণ করতে হবে, আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে। আমি অনেক তরুণ খেলোয়াড়কেই দেখছি, যারা ঠিক পথ হারায়নি, কিন্তু কানের চেয়ে মুখ বেশি ব্যবহার করে।’
এই ম্যাচ শেষে রাগের মাথায় এক দর্শককে ঘুষিও মারতে গিয়েছিলেন তিনি! নেইমারের এই লজ্জাজনক মুহূর্ত ধরা পড়েছে বেশ কিছু দর্শকের মোবাইল ফোনে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ভিডিওটা ছড়িয়ে দিতে দেরি করেননি। ভিডিওতে দেখা গেছে, ম্যাচ শেষে গ্যালারির দর্শকদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন পিএসজির খেলোয়াড়েরা, রানার্সআপ মেডেল নেওয়ার জন্য। আশপাশের দর্শকেরা প্রিয় খেলোয়াড়দের ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। নেইমারের বিষয়টা পছন্দ হয়নি। এক ভক্তের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে চাইলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, ফোন না কাড়তে পেরে তাঁর দিকে ঘুষি মারতে গিয়েছেন নেইমার। পরে পিএসজির অন্য খেলোয়াড়েরা তাঁকে ধরাধরি করে ওপরে নিয়ে যান। এখনো জানা যায়নি সেই ভক্ত নেইমারকে উসকানিমূলক কিছু বলেছিলেন কি না। দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হচ্ছে বোঝা গেলেও নেইমার রেগেমেগে সে সমর্থককে কী বলেছেন, সেটাও জানা যায়নি। তবে যা বোঝা গেছে, তাতেই যে নেইমার বিরাট এক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য।
একের পর এক এভাবেই নেতিবাচক কারণে শিরোনাম হচ্ছেন নেইমার। তাই প্রশ্ন উঠছে, নেইমার কী আদৌ পিএসজিতে থাকতে চান? নাকি বুঝতে পেরেছেন তাঁর একার পক্ষে একটা দলকে এভাবে টানা সম্ভব নয়?