গুনে গুনে আর মাত্র ৩০ দিন বাকি বিশ্বকাপ মহারণের। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ মিশনের জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন টাইগাররা। তবে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনার শিরোনামে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ক্রিকেটের সময়ে অক্রিকেটীয় খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি হাজির হন নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কাছে নানা সমস্যার কথাসহ হাসপাতালের অসংখ্য অসঙ্গতি, নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দেখতে পান। রাগে-ক্ষোভে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করেন মাশরাফি।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন হয়।
মাশরাফির এমন ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমহলে। এ নিয়ে ফেসবুকে বইছে প্রশংসার ঝড়। যে যার মতো করে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তারা।
তবে নড়াইল সদর হাসপাতালে মাশরাফির ঝটিকা অভিযান বিষয়ে গতকাল নিজের ফেসবুকে মাশরাফিকে উদ্দেশ করে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী আব্দুন নূর তুষার।
তার সেই চিঠিটি তুলে ধরা হলো-
‘প্রিয় ম্যাশ, মাশরাফি!
১১ জনের দলে ৪ জন নিয়ে ক্রিকেট খেলতে রাজি হবেন?
তাহলে ২৭ জনের জায়গায় ৭ জন দিয়ে হাসপাতাল চলে কিভাবে, সে প্রশ্ন সংসদে করেন!
প্রশ্ন করেন ৩০০ বেডের হাসপাতালে ১৮০০ রোগী ভর্তি করলে, ডাক্তার নার্স কেন ছয়গুণ বেশি নিয়োগ দেয়া হয় না।
স্টোরে গিয়ে প্রশ্ন নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন হাসপাতালে স্টোরগুলো কি যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্মত ?
ম্যাশ, আন্তর্জাতিক নিয়মে যে কোনো স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন দর্শকদের জন্য ডাক্তার, নার্স এমনকি নেবুলাইজার, অ্যামবু ব্যাগ, ডিফিব্রিলেটর থাকতে হয়।
মিরপুর স্টেডিয়ামে কোথায় সেই ডাক্তার বসেন, ডিফিব্রিলেটর আছে?
আশা করি, আগামীতে খেলার আগে মাঠে এগুলো নেই কেন সেটা ক্রিকেট বোর্ডে জিজ্ঞাসা করে সেই ভিডিও ভাইরাল করবেন!
মেরুদণ্ডহীন ডাক্তার সমাজকে ওএসডি করা যত সোজা, রোগীর জন্য সেবা নিশ্চিত করা তত সোজা নয়।
আপনার জেলা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট আছে, তার জন্য সব যন্ত্রপাতি আছে কিনা প্রশ্ন করেন।
বল ছাড়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন? তাহলে আধুনিক দুনিয়ায় চিকিৎসার জন্য কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন, স্টেন্ট বসানো এবং পেস মেকার বসানোর যন্ত্রপাতি আছে আপনার হাসপাতালে? সেটা জানতে চান। না থাকলে কার্ডিওলজিস্ট থাকা আর তার ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একই কথা।
ওটিতে যে এসি আছে সেটায় হেপা ফিল্টার আছে? সেন্ট্রাল মেডিকেল গ্যাস সাপ্লাই?
আপনাকে কি ক্রিকেট বোর্ড খেলার জন্য বল ব্যাট দেয়?
প্রশ্ন করেন কার্ডিওলজিস্ট যে বিশেষ কার্ডিয়াক স্টেথো দিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করে সেটা কি সরকার দেয়? সরকার প্রেসক্রিপশন লেখার কাগজ দেয়? সরকারি আউটডোর স্লিপে বিএমডিসি নম্বর থাকে? জায়গা আছে সব ওষুধের নাম লেখার? কলম দেয়? ডাক্তারের নাম ও নম্বর ছাড়া সব প্রেসক্রিপশন কিন্তু অবৈধ।
এভাবে অসম্মান, অপমান সয়ে, ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরামগিরি করে ডাক্তারি করাটা পুরো ডাক্তার সমাজের একটা বিরাট ফাজলামো। সবাইকে ওএসডি করে দানের গরু (ডিজি) অফিসে ন্যস্ত করে দেন। জাতি ফাজিলদের হাত থেকে রক্ষা পাক।
একটা অপ্রিয় কথা বলি, ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক। আপনি বেতন নেন খেলায় জেতার জন্য, উইকেট পাওয়ার জন্য।
তারপরে দু-চারটা টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়ে বেতনের অতিরিক্ত প্লট পান, কোটি টাকা এক্সট্রা পান।
তাহলে বেতন নেন কি খেলার মাঠে যাওয়া-আসা করার জন্য? জেতার জন্য নয়? ভালো খেলার জন্য তাহলে এক্সট্রা উপহার লাগে কেন? উইকেট নেয়াই তো আপনার কাজ। তাহলে বেশি উইকেট পেলে এক্সট্রা উপহার লাগে কেন? উইকেট না পেলে কি জরিমানা হয়?
কারণ এটা হলো উৎসাহ।
চাবকায়া ছাল তুলে ফেলেন ডাক্তারদের। কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু একটু প্রশ্ন করেন। মাগুরায় মায়ের পেটের মধ্যে গুলি খাওয়া সুরাইয়া নামের শিশুকে বাঁচালে কোনো ডাক্তার কিন্তু প্লট উপহার পায়নি। হাজার টাকা এক্সট্রা পায়নি। পৃথিবীর কঠিনতম অপারশেন জোড়া লাগা বাচ্চা আলাদা করলে কোনো পুরস্কার নেই।
কারা গোলাগুলি করেছিল মাগুরায়, সেটা পত্রিকায় দেখে নেবেন। না হলে সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞাসা করবেন। তাদের কি বিচার হয়েছে, সে প্রশ্নও করবেন।
প্রশ্ন করেন বিনা অপরাধে শারীরিকভাবে আক্রান্ত একজন চিকিৎসকও কি বিচার পেয়েছেন?
আপনি যে সার্জনকে অপারেশনের কথা বললেন, জানতে চান তো জেলা হাসপাতালে অ্যানেসথেশিওলজিস্টের পদে সরকারি কোনো ডাক্তার আছে কিনা? অ্যানেসথেশিওলজিস্ট ছাড়া অপারেশন হয়?
সংসদে প্রশ্ন করেন, আপনার এলাকায় ২০১৫ সাল থেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসক পোস্টিং দেয় নেই কেন?
ডাক্তার তো মানুষ ভাই। তার ছুটি লাগে, বিশ্রাম লাগে। নিরাপত্তাও লাগে। যন্ত্রপাতিহীন হাসপাতালে রোগী মরলে তাকে যখন মারধর করা হয়, তখন হাসপাতালে কেন তার কোনো নিরাপত্তা থাকে না?
চিকিৎসক কর্মস্থলে যায় না, তার জন্য নিয়মানুযায়ী শাস্তি হবে, প্রতিকার হবে, হোক। কিন্তু তাকে ধমকানো তো সরকারি বিধান নয়।
প্রশ্ন করেন, সবার ডিউটি ৮ ঘণ্টা। সপ্তাহে ৫ দিন। চিকিৎসক কেন ৬ দিন? কোন সরকারি আইনে এটা করা হচ্ছে?
ডাক্তারদের অন্যায় থাকলে সেটার শাস্তি হোক। কিন্তু এলাকার লোককে তো স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। তাই প্রশ্ন করতেই হবে। উত্তরও দরকারী।
ডাক্তার কোনো ফেরেশতা নন। কিন্তু সবখানে অনিয়ম রেখে হাসপাতালকে শুধু স্বর্গোদ্যান বানানো সম্ভব না।
আল্লাহ আপনাকে আরও বড় করুক।
এত বড় যাতে আপনি একদিন এসব প্রশ্ন করতে পারেন সংসদে।’