-নিজস্ব প্রতিবেদকঃ “প্রতিহিংসা দূরে রাখি, ভালোবাসার মেহেরপুর গড়ি” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ফেসবুক গ্রুপ ভিত্তিক সংগঠণ ” বাড়ি মেহেরপুর” মেহেরপুর দিবস পালন ও আলোচনাসভা করেছে।
বুধবার (২৪ফেব্রুয়ারি-২১ইং) বিকাল সাড়ে ৪ঘটিকার সময় “বাড়ি মেহেরপুর” এর নিজস্ব কার্যালয় (মরহুম এম.এম রুস্তম আলী এ্যাডভোকেট এর বাড়ির নীচতলা, মল্লিকপাড়া, ০৭ নং ওয়ার্ড, মেহেরপুর সদর মেহেরপুর) মেহেরপুর দিবস পালিত ও মেহেরপুর জেলার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
“বাড়ি মেহেরপুর”র উদ্যোগে মেহেরপুর দিবস পালিত ও আলোচনাসভা, মহকুমা থেকে জেলা গঠণ, জেলার নামকরণ
মেহেরপুর দিবস পালন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্বাবধায়নে এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদেন-এ্যাডভোকেট এম.এম নূরুজ্জামান বাবু (বাড়ি মেহেরপুরের পরিচালক ও গ্রুপের প্রধান অ্যাডমিন)। “বাড়ি মেহেরপুর” এর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আসাদুজ্জামান রাজ (এডমিন), রাজু আহম্মেদ (মডারেটর), সদস্য এম. সোহেল রানা প্রমুখ। বাড়ি মেহেরপুর গ্রুপের মেহেরপুর দিবস পালন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠানে এম. সোহেল রানা ইতিহাস থেকে বক্তৃতার মাধ্যমে জানান-
মহকুমা ও জেলা গঠণঃ ১৮৫৪ মতান্তরে ১৮৫৭ সালে মেহেরপুর, করিমপুর, গাংনী ও তেহট্ট মোট ৪টি থানার সমন্বয়ে মেহেরপুর নামে নদীয়া জেলায় একটি মহকুমা গঠিত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে যে যুদ্ধে বাঙালি তার শেষবারের মত স্বাধীনতা হারিয়েছিল, বাংলার ইতিহাস হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বাঙালির ঘরে আবার দু’শ ১৪ বছর পর ফিরে আসে, ঠিক তার উত্তরসূরী হিসাবে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়েছিল, মেহেপুরের এক অখ্যাত এলাকার সুখ্যাত আম্রকাননে, বর্তমানে “মুজিবনগর”। ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করলে নদীয়া জেলার প্রাচীনতম মহকুমা মেহেরপুরের ভাগ্যাকাশে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট দেশ বিভাগের পরপরই দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসে। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে মেহেরপুর মহকুমা সরকার কর্তৃক বিলুপ্ত ঘোষিত হয় এবং মেহেরপুর সদর থানাকে চুয়াডাঙ্গা মহকুমার সাথে একত্রিত করে দেওয়া হয় (মেহেরপুর মহকুমার ইজ্জত হারিয়ে একটি থানায় পরিণত হয়)। অপর দিকে গাংনী থানাকে কুষ্টিয়া সদর মহকুমার সাথে একত্রিত করা হয়। অবশ্য কিছুদিন পরেই গাংনী থানাকেও চুয়াডাঙ্গার সাথে সংযুক্ত করা হয়। অবশেষে মেহেরপুর মহকুমা বিলুপ্ত হয়ে। চুয়াডাঙ্গার অধীনে মেহেরপুর ও গাংনী দুটি পৃথক থানা গঠিত হয়। এই অবস্থা চলতে থাকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত। মেহেরপুরকে মহকুমা হিসাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়।
এসকল প্রবাহমান ঘটনার নেত্রীস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-এডভোকেট আবুল হায়াত, আব্দুর রহিম মোক্তার, কেয়াম উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট নলিনাক্ষ ভট্টাচার্য, শতীনাথ গুপ্ত মোক্তার, বিনয় মোক্তার, সাখাওয়াত মুন্সী ও ইদ্রিস আলী প্রমুখ। ইতোমধ্যে ১৯৫২ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোঃ জাকির হোসেন কুষ্টিয়ায় সরকারি সফরে আসলে উপরিউক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি বিশেষ দল তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এবং মেহেরপুরকে মহকুমা হিসাবে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। এর অল্প কয়েকদিনের মধ্যে মেহেরপুর পুনরায় মহকুমা হিসাবে তার আত্মমর্যাদা ফিরে পায়। ১৯৮৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক মেহেরপুর জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
নামকরণঃ যে কোন স্থান ও নামের সাথে কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তি, ফকির, দরবেশ বা সাধু-সন্ন্যাসী বা অধিক উৎপাদিত পণ্যের নামের সাদৃশ্য বা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মেহেরপুর নামকরণে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এই পর্যন্ত দুটি অনুমানসিদ্ধ তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। প্রথমতঃ ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামে জনৈক ব্যক্তির নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ষোড়শ শতকের অথবা তার কিছুকাল পরেই মেহেরপুর নামকরণের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের বাংলায় ভ্রমণগ্রন্থ (১৯৪০) বচনকার মিহির ও তার পুত্রবধূ খনা এই শহরে বাস করতেন। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর, পরবর্তীতে তা অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে।